ইটিআই বাংলাদেশ একটি শীর্ষস্থানীয় শ্রমিক অধিকার সংগঠন, যেটা সকল শ্রমিকের জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে। ইটিআই একটি বহুপাক্ষিক উদ্যোগ যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং ট্রেড ইউনিয়ন একসাথে কাজ করে যাতে প্রাইভেট সেক্টর অন্তর্ভূক্তিমূলক, স্থায়িত্বশীল সমৃদ্ধি অর্জনে ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করে যার মধ্যদিয়ে একই সাথে দারিদ্র হ্রাস পায় এবং মানবাধিকার সমুন্নত থাকে।
আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিকদের পাশে থাকার উপর জোর দেই। এই কাজে ব্যাবসার পুরো সাপ্লাই চেইনে উন্নততর বানিজ্য চর্চা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শোভন কর্ম পরিবেশের ধারণা বোঝা এবং তা বাস্তবায়নে দক্ষতা উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ’বিজনেস কোড’ তৈরি ও বাস্তবায়ন, সামাজিক সংলাপ কর্মসূচি এবং প্রশিক্ষণ ও আচরণগত পরিবর্তনের জন্য যোগাযোগ কার্যক্রম এবং দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে থাকি।
বাংলাদেশে ইটিআই কাজ করছে ২০১৫ সাল থেকে। অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি শিল্পখাতের পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিকদের একটি অংশের সাথে ইটিআই বাংলাদেশ কাজ করে। সেটি হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। এই খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এবং প্রতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের অন্যতম চালিকাশক্তি। এই খাতে শ্রমিক শোষণ/ এ্যাবিউজ ঐতিহাসিকভাবেই উপস্থিত ছিলো, বিশেষত সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে।
চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ সত্বেও আমরা দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহ যেমন সামাজিক সংলাপ এবং জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মস্থল কর্মসূচিসমূহ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছি। এসবের ফলে লাখো শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উন্নত হচ্ছে যেটা সকল শ্রমিকের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টির পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া।
প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতি
ইটিআইয়ের বহুপাক্ষিক এ্যাপ্রোচের মাধ্যমে ভ্যালু চেইনের প্রতিটি পর্যায়ে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কাজটি এগিয়ে নিতে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে।
ইটিআইয়ের কর্পোরেট সদস্যরা অন্তত ১২৯টি দেশের পঞ্চাশ হাজারের বেশি সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকে। আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা বিশ্বের ১৬০ মিলিয়ন শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করে। এবং বড় এবং ছোট বিশেষায়িত এনজিওরা ৩০টিরও বেশি দেশে শ্রমিক অধিকার বিষয়ে গবেষণা, পলিসি এ্যাডভোকেসি এবং কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।
আমাদের অনন্য, সহযোগিতামূলক/ কোলাবোরেটিভ এ্যাপ্রোচ ব্যবসাসমূহকে এথিক্যালি/ ন্যায়ানুগ ব্যবসা করতে, এবং অনেক কঠিন সমস্যা/ ইস্যু সমাধান করতে সহায়তা হরে যেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে একটি কোম্পানী বা একটি পক্ষের একক প্রচেষ্টায় সমাধান করা সম্ভব না।
ইটিআইয়ের সদস্য কোম্পানীরা ইটিআই বেইস কোড গ্রহণ/ এ্যাডাপ্ট করে। ইটিআই বেইস কোড আইএলও কনভেনশন ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমসংক্রান্ত কোড সমূহের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। বৈশ্বিক প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে শ্রমিকের অধিকার সমুন্নত রাখতে ইটিআই নীতি প্রণেতা ও অন্যান্যদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে, তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে এবং ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ’ক্যাটালিস্ট’/ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নারী শ্রমিক, অভিবাসী শ্রমিক এবং অধিকারবঞ্চিত শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ নজরে দেয়া হয়।
ইটিআই বাংলাদেশ
ইটিআই বাংলাদেশ লিমিটেড ইটিআই এর একট সাবসিডিয়ারী/ অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যেটি বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে রেজিস্টার্ড। ইটিআইয়ের বৈশ্বিক লক্ষ্য ও স্ট্রাটেজি/ কর্মপন্থা অর্জনে কর্মসমূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইটিআই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইটিআই শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জটিল সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন ধাপের সমস্যাগুলোকে বুঝতে এবং অতিক্রম করতে প্রাইভেট সেক্টরের সাথে কাজ করে।
বাংলাদেশে আমরা সামাজিক সংলাপ কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ ও আচরণগত পরিবর্তন কর্মসূচি, জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মপরিবেশ কর্মসূচি পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচির পাশাপাশি ’বিজনেস কোড’ বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছি।
পটভূমি
এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করা। আমাদের লক্ষ্য এমন এক বিশ্ব যেখানে শ্রমিকরা শোষণ এবং বৈষম্য থেকে মুক্ত এবং তারা স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সমতার পরিবেশ উপভোগ করে।
বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যে ইটিআই প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৪ বছর পরেও আমাদের এ্যাপ্রোচ/ কর্মপন্থা একই আছে। আমরা মনে করি, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্য দিয়ে বাধা যেগুলো শ্রমিকদের মানবাধিকার বাস্তবায়নে জটিল, বিভিন্নমুখী বাধা সমূহ অতিক্রম করে স্থায়িত্বশীল পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সারাবিশ্বের শ্রমিকদের জন্য।