ইটিআই বাংলাদেশ, মন্ডিয়াল এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন সহযোগিতায় ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) নারী কমিটি “জাতিসংঘ ঘোষিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫নভেম্বর -১০ ডিসেম্বর)”এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে । এই কার্যক্রমে সহায়তা করেছে নেদারল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রকল্প সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং নরওয়ে সরকারের উন্নয়ন সংস্থা নোরাড।
এই আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অধিদপ্তর পরিচালক মোঃ এনামুল হক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড. রোকসানা চৌধুরী, সলিডারিটি সেন্টারের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর মনিকা হার্টসেল, আইএলও ও শ্রম বিষয়ক ও বিজিএমইএর স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ন ম সাইফুদ্দিন, ডব্লিউআরসি'র সভাপতি মো. শাকিল আক্তার চৌধুরী, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল-আইবিসি সহ-সভাপতি বাবুল আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন আহমেদ অংশগ্রহণ করেন। সরকারি সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা, বিজিএমইএ, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা তৈরি পোষাকখাতে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার পরিস্থিতি এবং তা মোকাবেলায় অংশীজনদের করনীয় নিয়ে আলোচনা করেন।
কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অধিদপ্তর পরিচালক মোঃ এনামুল হক বলেন, “বাংলাদেশের জিডিপি এর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ নারীদের কর্মসংস্থান এবং শ্রমশক্তিতে তাদের অংশগ্রহন”।
সলিডারিটি সেন্টারের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর মনিকা হার্টসেল বলেন, “ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মূল কাজ হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার চলমান চর্চা ও সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ট্রেড ইউনিয়ন সবসময় জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা”
বিজিএমইএর স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ন ম সাইফুদ্দিন তার আলোচনায় মূল প্রবন্ধে উপস্থাপিত বিষয় ও দাবিসমূহ কে সমর্থন করেন। তিনি বলেন “আমি, আমরা আমাদের এ শিল্পের স্বার্থেই, আমাদের সুনামের কথা বিবেচনা করেই একটি নির্যাতনমুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরিতে আন্তরিক। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি এবং আমাদের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে”।
অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক কাঠামোর কারণে নারীদের অবৈতনিক শ্রমবোঝার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন যা তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে অন্যতম বাধা ।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন নারী কমিটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান জাকিয়া সুলতানা। তিনি নিরাপদ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এটি শুধু নারী শ্রমিকদের আইনি অধিকার নয়, বরং মৌলিক মানবাধিকার । বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত তৈরি পোশাক শিল্প নারীদের অমূল্য অবদানের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই নারী শ্রমিকদের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন হয়রানি নির্মূল করা অপরিহার্য।
নারী কমিটির উদ্বেগের কথা তুলে ধরে জাকিয়া সুলতানা ২০২২ সালে ইটিআই-জিআইজেড-ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। গবেষণায় দেখা যায় নারী শ্রমিকদের গার্মেন্টস খাত ছেড়ে যাওয়ার উদ্বেগজনক প্রবণতার অন্যতম প্রধান কারণ জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা। তিনি বলেন, এই বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে আইবিসি ও অন্যান্য শ্রমিক ও নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি শনাক্ত ও মোকাবেলায় আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুস্বাক্ষরের দাবি তোলা হয়। তারা বাংলাদেশ হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি রোধে সুস্পষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে শ্রম আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সাথে সংশোধিত শ্রমবিধি মালার যৌন হয়রানি প্রতিরোদেহ অভিযোগ কমিটি গঠনের অংশটুকু পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
আইবিসি'র মহিলা সম্পাদক চায়না রহমান সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে শূন্য-সহিষ্ণতা নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অধিবেশন শেষ করেন এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ কমিটি গঠন ও সক্রিয় কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।