২৯ নভেম্বর ২০২৩, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে ন্যায্য রূপান্তর, সবুজ জ্বালানি এবং টেকসই পরিবেশ বিষয়ে একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই) বাংলাদেশ। ৮৬ টি পোশাক কারখানা থেকে অংশগ্রহণকারীরা এই ওয়েবিনারে যুক্ত হন।
ওয়েবিনারের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইটিআই বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আবিল বিন আমিন। প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাপস বড়ুয়ার সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইটিআই বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার- প্রোগ্রাম, এভিডেন্স এন্ড লার্নিং মুনীর উদ্দীন শামীম। অনুষ্ঠানে সবুজ জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশর তৈরি পোশাকশিল্পের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কারখানার প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোঃ মাসুদুল হক মারুফ, ম্যানেজার-এইচ আর কমপ্লায়েন্স, এসেনশিয়াল ক্লথিং লিমিটেড এবং মোঃ কামরুজ্জামান নয়ন, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, আমান সুয়েটার লিমিটেড। শুভেচ্ছা বক্তব্যে আবিল বিন আমিন বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার দশটি দেশের মধ্যে একটি। আর এ কারণেই জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জলাবায়ু ও সবুজ জ্বালানি রূপান্তর বিষয়ে বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যে ধারাবাহিক সংলাপ এবং সমন্বিত ও যৌথ উদ্যোগের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি একই সাথে এ বিষয়ে ইটিআই বাংলাদেশের চলমান কার্যক্রমগুলি তুলে ধরেন। ইটিআই-পরিচালিত কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানায় চলমান পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিবেশ ও জলবায়ু-বান্ধব সামাজিক সংলাপ (গ্রীন স্যোসাল ডায়লগ) এবং তৈরি পোশাকশিল্পে ন্যায্য রুপান্তর, সুবজ জ্বালানি ও টেকসই পরিবেশ বিষয়ক এক বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন ধারণা, টেকসই বাণিজ্য, ন্যায্য রূপান্তর, সবুজ জ্বালানির গুরুত্ব এবং এসব বিষয়ের সাথে শ্রমিকের অধিকারের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ওয়েবিনার এর অন্যতম একটি অংশ ছিলো অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জরিপ। জরিপে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, সবুজ জ্বালানি এবং টেকসই পরিবেশের গুরুত্ব নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত প্রদান করেন। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা জলবায়ু এবং জ্বালানি সংক্রান্ত সমস্যাগুলোকে পোশাকশিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করেন। অনিয়ন্ত্রিত জলবায়ু পরিবর্তন শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে তারা আশংকা করেন। তারা আরও মনে করেন জলবায়ু, সবুজ জ্বালানি ও টেকসই পরিবেশ বিষয়ে কাজ তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক বাজার ও ক্রেতাগোষ্ঠীর চাহিদা, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা, ভবিষ্যত ঝুঁকি কমানো, পরিবেশে ক্রমবর্ধমান কার্বনের পরিমাণ কমানো, সর্বোপরি সরকার ও বিজিএমই-এর এ সংক্রান্ত লক্ষমাত্রা পূরণ করা।
কারখানার পক্ষ থেকে দু’জন অতিথি বক্তা জ্বালানি ও পানি ব্যবহারের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান পরিবেশবান্ধব ভোক্তা চাহিদা পূরণের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। তারা সোলার প্যানেল, এলইডি লাইটিং এবং পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপনসহ তাদের কারখানায় ইতিমধ্যে চলমান টেকসই উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সমগ্র খাতে পরিবেশ-বান্ধব অভ্যাসগুলো চর্চা করার কথা তাদের বক্তব্যে উঠে আসে। এই ব্যাপারে তারা বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।ওয়েবিনারের আলোচনা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে টেকসই পরিবেশ, সবুজ জ্বালানি, এবং ন্যায্য রূপান্তর বিষয়ে চিন্তা ও কার্যক্রমের সূচনা করবে, এই আশা ব্যক্ত করে ইটিআই ওয়েবিনারটি শেষ করে।